1. admin@channeldurjoy.com : admin : Salahuddin Sagor
  2. news.channeldurjoy@gmail.com : Editor :
ইতিহাসের মহাশিশু“শেখ রাসেল”: মামুন হাসান বিদ্যুৎ। - চ্যানেল দুর্জয়
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন

ইতিহাসের মহাশিশু“শেখ রাসেল”: মামুন হাসান বিদ্যুৎ।

  • প্রকাশিত : সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২০

সম্পাদকীয়।। শহীদ শেখ রাসেল বাংলাদেশের শিশু-কিশোর, তরুণ, শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের কাছে ভালবাসার নাম। অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, অধিকার বঞ্চিত শিশুদের আলোকিত জীবন গড়ার প্রতীক হয়ে গ্রাম-গঞ্জ-শহর তথা বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ জনপদ-লোকালয়ে শেখ রাসেল আজ এক মানবিক সত্তায় পরিণত হয়েছেন। মানবিক চেতনা সম্পন্ন সব মানুষ শেখ রাসেলের মর্মান্তিক বিয়োগ বেদনাকে হৃদয়ে ধারণ করে বাংলার প্রতিটি শিশু-কিশোর তরুণের মুখে হাসি ফোটাতে আজ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আজ শেখ রাসেলের ৫৬তম জন্মবার্ষিকী।১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকার চিরচেনা ৩২ নং সড়কের বঙ্গবন্ধুর ভবনে জন্মগ্রহন করে রাসেল। বড় চার ভাই-বোনের পর রাসেলের জন্ম সবাইকে আনন্দে ভরিয়ে তোলে। একটু বড়সড়ই হয়েছিলো শিশু রাসেল। জন্মের কিছুক্ষন পরেই সকলকে জানানো হয়। পরে বোন হাসিনা এসে তার ওড়না দিয়ে ভেজা মাথা পরিষ্কার করে দেন।


সেইদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘রাসেলের জন্মের আগের মুহূর্তগুলো ছিলো ভীষণ উৎকণ্ঠার। আমি, কামাল, জামাল, রেহানা ও খোকা চাচা বাসায়। বড় ফুফু ও মেঝ ফুফু মার সাথে। একজন ডাক্তার ও নার্সও এসেছেন। সময় যেন আর কাটে না। জামাল আর রেহানা কিছুক্ষণ ঘুমায় আবার জেগে ওঠে। আমরা ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে জেগে আছি নতুন অতিথির আগমন বার্তা শোনার অপেক্ষায়। মেঝ ফুফু ঘর থেকে বের হয়ে এসে খবর দিলেন আমাদের ভাই হয়েছে। খুশিতে আমরা আত্মহারা। কতক্ষণে দেখবো। ফুফু বললেন, তিনি ডাকবেন। কিছুক্ষণ পর ডাক এলো। বড় ফুফু আমার কোলে তুলে দিলেন রাসেলকে। মাথাভরা ঘন কালোচুল। তুলতুলে নরম গাল। বেশ বড় সড় হয়েছিলো রাসেল।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের ভক্ত। রাসেলের জন্মের দু’বছর পূর্বে ১৯৬২ সালে কিউবাকে কেন্দ্র করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেনেডি এবং সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী ক্রুশ্চেফ-এর মধ্যে স্নায়ু ও কূটনৈতিক যুদ্ধ চলছিল। যেটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই বিশ্বমানবতার প্রতীক হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল।মানবসভ্যতা বিধ্বংসী সম্ভাব্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধটি থামাতে তিনি সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন। প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছিলেন। বিশ্ব জনমত গড়ে উঠেছিল রাসেলের যুক্তির পক্ষে। কেনেডি-ক্রুশ্চেফ এক পর্যায়ে যুদ্ধংদেহী মনোভাব থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁরই আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে বঙ্গবন্ধু তার কনিষ্ঠ পুত্রের নাম করন করেন রাসেল।
মা-বাবা-ভাই-বোন সবার বড় আদরের এই রাসেল সোনার চোখের তারায় যেন অন্য রকম আলো ছিল। বুদ্ধিদীপ্ত চোখের চাওয়া আর মিষ্টি হাসি নিয়ে দিনে দিনে রাসেল বড় হতে থাকে।ভালো মানুষ হয়ে বেড়ে ওঠার পেছনে পরিবার একটি বড় ভূমিকা পালন করে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন একজন আদর্শ মাতা। তিনি তাঁর সন্তানদের নৈতিক শিক্ষায় মানুষ করেছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানবিক গুণাবলি। রাসেল যখন একটু বড় হলো, তখন রান্নাঘরে লাল ফুল আঁকা থালায় করে পিঁড়ি পেতে বসে এই কাজের লোকদের সঙ্গে ভাত খেতে খুব পছন্দ করত। উড়ে বেড়াতে, ঘুরে বেড়াতে রাসেলের খুব ভালো লাগত। টুংটাং বেল বাজিয়ে সাইকেল চালাতে তার কোনো জুড়ি ছিল না। ছোট রাসেলের কোলে চড়ার বয়স থেকেই কবুতর খুব পছন্দ ছিল। সে যখন সবে হাঁটতে শিখেছে, তখনই কবুতরের পেছনে পেছনে ছুটেছে। একটু বড় হলে নিজের হাতে কবুতরের খাবার দিয়েছে। টুঙ্গিপাড়ায় তাদের গ্রামের বাড়িতেও কবুতর ছিল। সকালে নাশতার জন্য পরোটা ও কবুতরের মাংস ভুনা পরিবারের সবার প্রিয় খাবার হলেও রাসেল কোনো দিন কবুতরের মাংস খেত না। কবুতরের প্রতি তার সে কী মায়া! অনেকে অনেক চেষ্টা করেও তার মুখে এক টুকরা কবুতরের মাংস দিতে পারেনি। রাসেলের মাছ ধরারও খুব শখ ছিল। তবে মাছ ধরার পর আবার তা ছেড়ে দিতেই সে বেশি মজা পেত। এটাই ছিল তার মাছ ধরার খেলা।ঢাকায় তার খেলার সাথী তেমন একটা ছিলো না কিন্তু যখন তারা টঙ্গিপাড়ায় বেড়াতে যেত, সেখানে তার খেলার সাথি ছিলো অনেক। সেই বাচ্চাদের জড়ো করতো এক জায়গায়, তাদের জন্য খেলনা বন্দুক বানাতো আর সেই বন্দুক হাতেই তাদের প্যারেড করাতো। আসলে রাসেলের পরিবেশটাই ছিলো এমন। রাসেলের খুদে বাহিনীর জন্য জামা-কাপড় ঢাকা থেকেই কিনে দিতে হতো। প্যারেড শেষে সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা থাকতো। তখন যদি রাসেলকে কেউ জিজ্ঞেস করতো বড় হয়ে তুমি কি হবে? রাসেল বলতো ‘আর্মি অফিসার হবো’।মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাসেলের এই ইচ্ছা মনের কোণে দানা বাঁধতে শুরু করে। এ থেকেই বড় দুই ভাই মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর তাঁদের কাছ থেকে খুব আগ্রহ নিয়ে যুদ্ধের গল্প শুনত রাসেল। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে যখন অসহযোগ আন্দোলন চলছিল, তখন পুলিশের গাড়ি দেখলেই বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে রাসেল চিৎকার করে বলত, ‘ও পুলিশ-হরতাল।’ হরতাল হরতাল বলে চিৎকার করে স্লোগান দিত ‘জয় বাংলা, জয় বাংলা।’ আন্দোলনের রক্ত যে তার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতার শত্রু ঘৃণ্য ঘাতকদের নির্মম বুলেট থেকে রক্ষা পাননি শিশু শেখ রাসেল। বঙ্গবন্ধু এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে নরপিশাচরা নির্মমভাবে তাকেও হত্যা করেছিল। তিনি তখন ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। এর আগে আল্লাহর দোহাই দিয়ে না মারার জন্য খুনিদের কাছে আর্তি জানিয়েছিলেন শেখ রাসেল। চিৎকার করে তিনি বলেছিলেন, ‘আল্লাহর দোহাই, আমাকে জানে মেরে ফেলবেন না। বড় হয়ে আমি আপনাদের বাসায় কাজের ছেলে হিসেবে থাকবো। আমার হাসু আপা দুলাভাইয়ের সঙ্গে জার্মানিতে আছেন। আমি আপনাদের পায়ে পড়ি, দয়া করে আপনারা আমাকে জার্মানিতে তাদের কাছে পাঠিয়ে দিন।’ সেদিন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠপুত্র রাসেলের এই আর্তচিৎকারে স্রষ্টার আরশ কেঁপে উঠলেও টলাতে পারেনি খুনী পাষাণদের মন। বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মত এই নিষ্পাপ মহাশিশুকেও ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়। আজ শেখ রাসেলের ৫৬তম জন্মবার্ষিকী। কত দীর্ঘ সময়, কেমন দ্রুতই চলে যায়, আবার কেমন যেন আটকে থাকে ঠিক সেই একই জায়গায়। সেই জন্যই হয়তো আজ আবার ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ নয়, ২০২০। ৪৫টা বছরের পার্থক্যই শুধু। এই ৪৫ বছরে অবশ্য পাল্টে গেছে পৃথিবীর অনেক কিছুই, মুছে গেছে রাসেলের গা থেকে চুইয়ে পড়া তাজা রক্তের দাগ। তবুও কেন যেন মনে হয় রাসেল আজও আছে। শেখ রাসেল তার সোনালি শৈশব পেরুতে পারেনি আজও। তবে মরেছে কি? না মরেনি, তোমাদের মাঝেই রাসেল বেঁচে থাকবে চিরদিন, সেই ছোট্ট রাসেল হয়ে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের দিন-তারিখ

  • শনিবার (রাত ৪:০৪)
  • ৪ঠা মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২৫শে শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি
  • ২১শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

এই মুহুর্তে সরাসরি সংযুক্ত আছেন

Live visitors
230
3392134
Total Visitors