1. admin@channeldurjoy.com : admin : Salahuddin Sagor
  2. news.channeldurjoy@gmail.com : Editor :
৩ নভেম্বর জেল হত্যা : জাতীয় রাজনীতির ঘৃণ্য অধ্যায়। - চ্যানেল দুর্জয়
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন

৩ নভেম্বর জেল হত্যা : জাতীয় রাজনীতির ঘৃণ্য অধ্যায়।

  • প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০২০

 

সম্পাদকীয় : বাঙালির ইতিহাসে বহু গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রয়েছে। তেমনি এক অধ্যায় ১৯৭১। সেটি বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে অনন্য অধ্যায়। ওই বছরে বাঙালি অর্জন করেছে তার শ্রেষ্ঠ সম্পদ স্বাধীনতা। আবার কিছু কিছু দিন আছে, যেগুলো স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে কালো দিন হিসেবে পরিগণিত। ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট ও ৩রা নভেম্বর তেমনি নৃশংসতম দিন। ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয় সপরিবারে। ৩রা নভেম্বর নির্মমভাবে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে।
জেল হত্যা দিবস নামে পরিচিত ৩রা নভেম্বর ইতিহাসের এমন এক সন্ধিক্ষণে আমাদের দাঁড় করিয়ে দেয় যেখানে আমাদের জাতিসত্তা এবং মুক্তিযুদ্ধের মহত্তম অর্জন সবচেয়ে কঠিন সংকটের অগ্নি পরীক্ষায়। সেদিনের সেই নৃশংস ঘটনা তথা কেন্দ্রীয় কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে হত্যার ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে শুধু নয়, জাতীয় ইতিহাসেরও এক ভয়ংকর বাঁক ফেরানো অধ্যায়। কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় এমন জঘন্য, নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকান্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা সেদিন দেশমাতৃকার সেরা সন্তান এই জাতীয় চার নেতাকে শুধু গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, কাপুরুষের মতো গুলিবিদ্ধ দেহকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে একাত্তরে পরাজয়ের জ্বালা মিটিয়েছিল। বাঙালীকে পিছিয়ে দিয়েছিল প্রগতি- সমৃদ্ধির অগ্রমিছিল থেকে। ইতিহাসের এই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, স্তম্ভিত হয়েছিল সমগ্র বিশ্ব। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড ছিল একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা। বিশ্বাসঘাতক খুনীদের পরিকল্পনা, উদ্দেশ্য আজ জাতির সামনে পরিষ্কার। মিথ্যা কুয়াশার ধূম্রজাল ছিন্ন করে আজ নতুন সূর্যের আলোকের মতো প্রকাশিত হয়েছে সত্য। 

বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রী সভার সবচেয়ে ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতক সদস্য হিসেবে পরিচিত এবং তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদ এবং বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আব্দুর রশীদ জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার এ পরিকল্পনা করেন। এ কাজের জন্য তারা আগে ভাগে একটি ঘাতক দলও গঠন করে। এ দলের প্রধান ছিলেন রিসালদার মুসলেহ উদ্দিন। তিনি ছিলেন ফারুকের সবচেয়ে আস্থাভাজন অফিসার। ১৫ আগস্ট শেখ মনির বাসভবনে যে ঘাতক দলটি হত্যাযঞ্জ চালায় সেই দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিল মুসলেহ উদ্দিন। দক্ষিণ এশিয়ার প্রখ্যাত সাংবাদিক অ্যান্থনী মাসকারেনহাস তার ‘বাংলাদেশ অ্যা লিগ্যাসি অব ব্লাড ”গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।

তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরপরেই জেল খানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনাটি এমন ভাবে নেয়া হয়েছিল পাল্টা অভ্যুথান ঘটার সাথে সাথে যাতে আপনা আপনি এটি কার্যকর হয়। আর এ কাজের জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি ঘাতক দলও গঠন করা হয় ।

এই ঘাতক দলের প্রতি নির্দেশ ছিল পাল্টা অভ্যুথান ঘটার সাথে সাথে কোন নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে তারা জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করবে।পচাঁত্তরের ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ পাল্টা অভ্যুথান ঘটানোর পরেই কেন্দ্রীয় কারাগারে এই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে জাতির জনককে তাঁর ঐতিহাসিক ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। পরে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময় সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের সমধিক পরিচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদ একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কোটি কোটি বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর অপর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এএইচএম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি ও কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

গোলাম মুরশিদ তার ‘মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর’ গ্রন্থে লিখেছেন মোশতাক জেল হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন কেবল ফারুক আর রশিদকে নিয়ে। তিনি ঠিক করেছিলেন যে, যে কোনো পাল্টা অভ্যুথান হলে কেন্দ্রিয় কারাগারে আটক তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী এবং কামারুজ্জামানকে হত্যা করা হবে। যাতে নতুন সরকার গঠিত হলেও এই নেতারা তাতে নেতৃত্ব দিতে না পারেন। অন্যদিকে পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্য এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতা হত্যার তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল লন্ডনে। এসব হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন ও বিচারের প্রক্রিয়াকে যে সমস্ত কারণ বাধাগ্রস্ত করেছে সেগুলোর তদন্ত করার জন্য ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই তদন্তকমিশন গঠন করা হয়।

তবে সেই সময়ে বাংলাদেশ সরকারের অসহযোগিতার কারণে এবং কমিশনের একজন সদস্যকে ভিসা প্রদান না করায় এ উদ্যোগটি সফল হতে পারেনি। সে সময়ে বাংলাদেশের সরকার প্রধান ছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।অধ্যাপক আবু সাইয়িদের ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ফ্যাক্টস এন্ড ডুকমেন্টস’ গ্রন্থে এই কমিশন গঠনের বর্ণনা রয়েছে।এতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, মনসুর আলীর পুত্র মোহাম্মদ সেলিম এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আবেদনক্রমে স্যার থমাস উইলিয়ামস, কিউ. সি. এমপি’র নেতৃত্বে এই কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। বাংলাদেশ ও বিদেশে অনুষ্ঠিত জনসভাসমূহে এ আবেদনটি ব্যাপকভাবে সমর্থিত হয়।

৩রা নভেম্বর ইতিহাসের সেই কালো অধ্যায় স্মরণ করার দিন। বাঙালীর প্রগতিশীল রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিনাশ করতে চায় যারা তাদের নতুন করে প্রজন্মের কাছে চিনিয়ে দেয়ার দিন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি যারা করতে চায় সেই তরুণ প্রজন্মকে জানিয়ে দিতে হবে-আদর্শের প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের মূল দর্শনের প্রতি কতখানি অবিচল আস্থা থাকা উচিত। নিজের জীবনও যে আদর্শের কাছে তুচ্ছ তার স্বাক্ষরতো রেখে গেছেন কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতা তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের কাছে আত্মসমর্পন করেননি তারা, আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করেননি খুনীদের মন্ত্রীসভায়। এখন রাজনীতিতে সেই নৈতিকতারই অভাব চরম পর্যায়ে। নতুন প্রজন্ম গর্ব করতে পারে- এমন ত্যাগী নেতা বঙ্গবন্ধু ও তার ঘনিষ্ঠ সহচররা আমাদের ইতিহাসে আছেন, তাদের কথা বারবার নানা আঙ্গিকে নবীন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।

লেখক : মামুন হাসান বিদ্যুৎ, ঢাঃবিঃ।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের দিন-তারিখ

  • শনিবার (সকাল ৬:৫০)
  • ৪ঠা মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২৫শে শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি
  • ২১শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

এই মুহুর্তে সরাসরি সংযুক্ত আছেন

Live visitors
240
3395144
Total Visitors