1. admin@channeldurjoy.com : admin : Salahuddin Sagor
  2. news.channeldurjoy@gmail.com : Editor :
ঢাবিতে আত্মহননের ভয়ঙ্কর রূপ-তিন বছরে ২২ আত্মহত্যা! - চ্যানেল দুর্জয়
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:৩৯ অপরাহ্ন

ঢাবিতে আত্মহননের ভয়ঙ্কর রূপ-তিন বছরে ২২ আত্মহত্যা!

  • প্রকাশিত : সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০

ক্যাম্পাস প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৬ বছরে আত্মহত্যা করেছেন ৩৯ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে গত চার বছরেই আত্মহত্যা করেছেন ২৬ জন। পারিবারিক কলহ, সম্পর্কের টানাপোড়েন, বেকারত্ব, শিক্ষাজীবন নিয়ে হতাশা, নিঃসঙ্গতা, মানসিক চাপ, তীব্র বিষন্নতায় তারা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন বলে মনে করেছেন নিহতের পরিবার, সহপাঠী ও বিশেষজ্ঞরা।

২০২০ সালে শুরুটা ভালো হলেও প্রাণঘাতী করোনা প্রাদুর্ভাবের কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয় আত্মহত্যা নামের এই নতুন মহামারীর। করোনা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত আত্মহত্যার এ মিছিলে যুক্ত হয়েছেন ১০ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে গত তিন দিনেই আত্মহত্যা করেছে দুই শিক্ষার্থী।

সর্বশেষ ২৭ ডিসেম্বর আত্নহত্যার এ পথ বেছে নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম সিয়াম। নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে সিয়াম। পরে পরিবারের সদস্যরা তার লাশ দেখতে পায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন।

চলতি বছরে আত্মহত্যা তালিকায় যেসব ঢাবি শিক্ষার্থীরা-

৮ এপ্রিল ২০২০ আত্মহত্যা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তরুণ সেন। সরকারি চাকরি না পাওয়ায় এবং চাকরির বয়স শেষ হওয়া নিয়ে হতাশায় আত্মহত্যা করেন তরুণ সেন।

সহপাঠীদের থেকে জানা গেছে, করোনাকালে তরুণ সেন বেকারত্ব এবং পারিবারিক অভাব অনটন থেকে মুক্তি পেতে ঘুমের ওষুধ অতিরিক্ত মাত্রায় খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

২২ জুন ২০২০ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন সকালে নাটোর সদরের হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকায় সুমাইয়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

তবে সুমাইয়ার পরিবারের সদস্যদের দাবি, সুমাইয়াকে হত্যা করা হয়েছে। আর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবি, সে আত্মহত্যা করেছেন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, সুমাইয়ার দেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

১৭ আগস্ট ২০২০ নিজ বাড়িতে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইমাম হোসাইন। এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘আল-বিদা’ লিখে স্ট্যাটাস দেন ওই শিক্ষার্থী।

তার বন্ধুরা জানান, প্রেমঘটিত সমস্যার কারণে আত্মহত্যা করেন তিনি। প্রেমিকার বাবার কটুকথা আর নিজের প্রেমিকার সাথে সম্পর্কে কিছুটা ভাঙনের জেরে আত্মহত্যার পথকে বেছে নেন সেই শিক্ষার্থী।

১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৫-০৬ সেশনের শিক্ষার্থী আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসাদ রাজধানীর কাঁঠালবাগানের ৯ তলা থেকে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

তবে ঢাবির ওই শিক্ষার্থীর পরিবার এবং বন্ধুদের দাবি, তাকে বারান্দা থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ত্রিপল-ই) বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী কামরুল বাহার চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেন। সম্প্রতি জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি।

তার পরিবার এবং বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ফার্মগেটের একটি আবাসিক হোটেল থেকে ওই ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে তিনি একটি চিরকুট লিখে রেখে গেছেন।

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র জাকারিয়া হক শুভ পারিবারিক কলহের কারণে আত্মহত্যা করেছেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।

শুভ’র শ্বাশুড়ির দাবি, স্ত্রী নীরার সাথে সিগারেট খাওয়া নিয়ে কথাকাটির জেরে সে ফ্যানের সাথে ওড়না ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করেন।

তবে শুভ’র পরিবারের দাবি, তাকে মেয়ের পরিবারের সদস্যরা হত্যা করেছেন। পরে নিহতের বড় বোন হাসিনা নাজনীন বিনতে হক বাদী হয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

১৪ অক্টোবর ২০২০ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী শুভজ্যোতি মন্ডল তীব্র বিষন্নতা ও মানসিক চাপ থেকেই আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেন। ওইদিন বিকেলে সংবাদ পেয়ে আদাবর মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ৪ নম্বর রোডের ১৪১ নম্বর বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

শুভজ্যোতির বোন তাপসী মণ্ডল বলেন, সে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল। কিন্তু বাহ্যিকভাবে সেটা দেখা যেত না। ঢাকা শহরের বেশ কয়েকজন ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ট্রিটমেন্ট এবং প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

২৬ অক্টোবর ২০২০ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী ফারিহা তাবাসসুম রুম্পা আত্মহত্যা করেন।

রুম্পার একাধিক সহপাঠী জানান, ব্যক্তিগতভাবে রুম্পা একজন ছেলেকে পছন্দ করতো, যা তার পরিবার মেনে নেয়নি। এর মধ্যেই বাবা-মা তার বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। মূলত এ বিষয়টি নিয়েই পারিবারে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। পুরো বিষয়টি মেনে নিতে না পেরেই আত্মহত্যা করেছে রুম্পা।

২৫ ডিসেম্বর ২০২০ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রুমানা ইয়াসমিন। ওই রাতে রাজধানীর আজিমপুর স্টাফ কোয়ার্টারের পারিবারিক কলহের জেরে নিজ কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন তিনি। পরে তার ঘর থেকে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ৩৭তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে আনসার বাহিনীর সহকারী পরিচালক হিসেবে ট্রেনিংরত ছিলেন।

রুমানার খালু জানিয়েছিলেন, ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী রুমানার বিয়ে নিয়ে পরিবারের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। এর ফলে তিনি হতাশাগ্রস্ত ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রক্টরের কার্যালয় ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮ জন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।

২০১৯ সালে আত্মহত্যা করেন ৩ শিক্ষার্থী। ২০১৮ সালে আত্মহত্যা করেন ৯ শিক্ষার্থী। ২০১৭ সালে আত্মহত্যা করেন ৩ শিক্ষার্থী। ২০১৬ সালে আত্মহত্যা করেন একজন। ২০১৫ সালে আত্মহত্যা করেন ৪ শিক্ষার্থী।

এছাড়া ২০১৪ সালে ১ জন, ২০১২ সালে ১ জন, ২০০৭ সালে ২ জন ২০০৬ সালে ২ জন ২০০৫ সালে ২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।

দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানেও আত্মহত্যা মিছিল দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শ দান দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও এডুকেশনাল এবং কাউন্সিলিং সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মেহজাবীন হক বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আত্মহত্যার পেছনে একসাথে অনেকগুলো কারণ কাজ করে, সুনির্দিষ্ট একটি কারণ থাকে না। যখন একাধিক কারণ একসাথে চাপ সৃষ্টি করে তখন একজন মানুষ এ ধরণের পথ বেছে নেয়।

তিনি আত্মহত্যার পেছনে মানসিকভাবে রোগাক্রান্ত, মাদকাসক্ত, হতাশা, বেকারত্ব ইত্যাদি কারণকে দায়ী করেছেন।

তিনি বলেন, আত্মহত্যার পেছনে পারিপার্শ্বিক অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোন ব্যক্তি যেখানে বসবাস করে, সেখানে তার সাপোর্ট সিস্টেমটা কেমন, তা জানা জরুরি। একজন মানুষ যখন মানসিকভাবে আঘাত পায় বা ব্যর্থ হয় তখন তা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য পরিবার-বন্ধুদের সহমর্মিতার প্রয়োজন।

অধ্যাপক মেহজাবীন বলেন, মহামারীর কারণে সকলের ওপর মানসিক চাপটা অনেক বেশি। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেষ হচ্ছে না, চাকরি পাচ্ছে না, বিদেশে গমনেচ্ছু শিক্ষার্থীরা বিদেশে যেতে পারছে না। প্রত্যেকের পরিকল্পনাগুলো আটকা পড়ে গেছে, এটার সাথে খাপ খাওয়ানো অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। যখন এগুলোর সাথে অন্য কারণগুলো যেমন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বেকারত্ব ইত্যাদি যুক্ত হয় তখন তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কারণ অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা বৃদ্ধি পেলে আত্মহত্যা বৃদ্ধি পায়।

জীবনে একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করা ‘ওয়ান এ্যান ওনলি’ একটি বিষয়ই জীবনের সব, এ ধরণের চিন্তাভাবনা আত্মহত্যার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, আত্মহত্যা রোধে পরিবার-সহপাঠীরা অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। একজন ব্যক্তি হঠাৎ করেই প্রাণঘাতী সিদ্ধান্ত নেয় না। তার পূর্বে সে কিছু আলামত বা চিহ্ন যেমন, ‘কিছুই ভাল্লাগে না, মরে গেলে ভালো হয়’ বহন করে থাকে। এমতাবস্থায় পরিবার- সহপাঠীদের উচিৎ তাকে থামিয়ে না রেখে তার ভেতরের বিষয়টি জানার চেষ্টা করা।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের দিন-তারিখ

  • রবিবার (দুপুর ১২:৩৯)
  • ১৯শে মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১১ই জিলকদ ১৪৪৫ হিজরি
  • ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

এই মুহুর্তে সরাসরি সংযুক্ত আছেন

Live visitors
137
3843922
Total Visitors