অনলাইন ডেস্ক।। যশোর রেলস্টেশনে ‘লোডিং-আনলোডিং’ প্লাটফর্ম নির্মাণের জন্য দেড়শরও বেশি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হলেও রেলওয়ের জায়গা দখলকারী স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতার ঠিকাদারী অফিস এখনো অক্ষত রয়েছে। স্টেশনের দুই নম্বর প্লাটফর্মের কয়েক কদম দূরত্বে ঠিকাদারী ওই অফিসটির অবস্থান। দলীয় কার্যালয়ের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সেখানে স্বেচ্ছাসেবকলীগনেতা আসাদুজামান মিঠু ব্যক্তিগত ঠিকাদারী অফিস করেছেন। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র বলছে, দলের প্রভাব খাটিয়ে স্থাপনা উচ্ছেদ আটকে রাখা হয়েছে। ফলে বহু স্থাপনা উচ্ছেদ হলেও সেটি এখনো বহাল তবিয়তে আছে।
জানা গেছে, মালামাল খালাসের সক্ষমতা বাড়াতে যশোর স্টেশনে ইয়ার্ড নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর এজন্য স্টেশনের চার নম্বর লাইনটির সম্প্রসারণসহ মালামাল ওঠানো- নামানোর জন্য সেখানে একটি প্লাটফর্ম নির্মাণ হবে। যার জন্য দখলে থাকা প্রায় দুইশ’র মত স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে রেলওয়ে। গত মাসের ২৩ তারিখে উচ্ছেদ অভিযান চালায় রেলের পশ্চিম অঞ্চলের ‘ডিভিশনাল এস্টেট অফিস’। কিন্তু সেদিন অবৈধ দখলদার কাউকে ছাড় না দেওয়া হলেও আসাদুজামান মিঠুর ঠিকাদারী অফিসটি উচ্ছেদ হয়নি। অথচ অন্যসব অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু ওই অফিসটি এখনও উচ্ছেদ না হওয়ায় বহাল তবিয়তে সেখানে এখনো ঠিকাদারী কারবার চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, উচ্ছেদ সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করে রেলের সম্পত্তি দখল করে নির্মিত ঠিকাদারী অফিসটি টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে অফিসটিতে টাঙানো দলীয় সাইনবোর্ডটিকে পুঁজি করা হয়েছে। অফিস যাতে না ভাঙা হয় তার জন্য দলীয় প্রভাব কাজে লাগানো হয়েছে। জানা যায়, যশোর স্টেশনের দুই নম্বর প্লাটফর্মের পেছনে পাকা একটি রাস্তা রয়েছে। ওই রাস্তাটি মালবাহী ট্রেনের মালামাল খালাসের পর পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয়। আর রেলওয়ের ঐ রাস্তার খানিকটা ও তার পাশের জায়গা দখল করে সেখানে ঠিকাদারী অফিস করেছেন আসাদুজামান মিঠু। আবার অফিসটিতে স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাইনবোর্ডও টাঙিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি উচ্ছেদের নেতৃত্ব দেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও ডিভিশনাল এস্টেট অফিসার নুরুজ্জামান। সেদিন তিনি উচ্ছেদ না করে ঠিকাদারী অফিসটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য কয়েকদিন সময় দেন। তবে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিকাদারী অফিসটি সরিয়ে নেওয়ার সময়ও পেরিয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও অফিসটি সরানো হয়নি।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে যশোর রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ওয়ালি উল হক জানান, তাদের আওতার মধ্যে থাকা সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। কোনোটাই বাদ পড়বে না।
বিষয়টি নিয়ে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের (পাকশি) ডিভিশনাল এ স্টেট অফিসার মো. নুরুজ্জামান জানান, ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু হলে মালামাল আসতে শুরু করবে। তখন নির্মাণ কাজের সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওই অফিসটি সেখান থেকে অপসারণ। কারণ ইয়ার্ডের নির্মাণ পরিকল্পনার আওতার মধ্যে থাকা কোনো স্থাপনা রেখে দিয়ে এটির নির্মাণকাজ চালানো সম্ভব হবে না। কাজেই কোনো অবৈধ স্থাপনা সেখানে থাকার সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, যশোর স্টেশন ইয়ার্ড সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। এখানে শেডসহ একটি হাই প্লাটফর্ম (উ” প্লাটফর্ম) নির্মাণ হবে। যাতে বর্ষাকালেও নিরবচ্ছিন্নভাবে মালামাল ‘ওঠা-নামা’ করানো যায়। সেইসাথে ‘ম্যানুয়াল’ (হস্তসাধিত) পদ্ধতির ‘লোডিং-আনলোডিং’ যাতে সহজসাধ্য হয়। আর ওই প্লাটফর্মের পাশ দিয়ে মালামাল পরিবহনের জন্য প্রশস্ত একটি রাস্তাও নির্মাণ হবে। পাশাপাশি যশোর স্টেশনের চার নম্বর লাইনটির সম্প্রসারণ হবে। এর কাজও অচিরেই শুরু হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: দৈনিক সমাজের কথা।