জগন্নাথের প্রিয় গীত গোবিন্দ মাহাত্ম্য
উজ্জ্বল (রায় নড়াইল) জেলা প্রতিনিধি।। গীত গোবিন্দ যে জগন্নাথের কতটা প্রিয় তার পরিচয় বেশ কয়েকটি ঘটনা থেকেই জানা যায়। জয়দেবের গীতগোবিন্দ রচনা সমাপ্ত হলে তা তিনি জগন্নাথকে উৎসর্গ করবেন বলে শিষ্য পরাশরকে নিয়ে শ্রীক্ষেত্রের দিকে রওনা দিলেন।যেতে যেতে তার রচিত পদ,……..”রতিসুখসারে গতমভিসারে”….এই শ্লোকটি দু-এক চরণ আবৃত্তি করতেই দেখলেন জঙ্গলের মধ্যে এক রাখাল সুর করে পদটি গাইতে গাইতে চলে গেল। তা দেখে জয়দেব মনে মনে ভাবতে লাগলেন আমার বহুকালের সযত্নে গ্রথিত গীতগোবিন্দম জগন্নাথের চরণে উৎসর্গ করার আগেই উচ্ছিষ্ট হয়ে গেল। কি করে আর জগন্নাথকে উৎসর্গ করবো এই ভেবে মনের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে গ্রন্থখানি নদীর জলে ছুঁড়ে ফেলেদিলেন।
এমন সময় জগন্নাথ দৈববাণী হল….. ‘জয়দেব তোমার গীতগোবিন্দ মৌলিক। তোমার রচিত গীত গোবিন্দ আগেই গ্রহন করেছিলাম শ্লোক লেখার সময়। গীত গোবিন্দ আমার বড়ই প্রিয় তাই রাখাল বেশে আমিই সেই গীত আস্বাদন করছিলাম।’…….জয়দেব তখন কাতর কণ্ঠে উন্মাদের মতো কাঁদতে কাঁদতে বললেন, প্রভু গো আমি যে বড়ই অজ্ঞান, তোমার লীলা বোঝার সাধ্য যে আমার নেই। এই বলে মাটিতে আছাড় খেয়ে পড়লেন। ভক্তের কাতর কান্না দেখে তরঙ্গায়িত নদীগর্ভ থেকে মকর বাহিনী মা গঙ্গা গীতগোবিন্দ খানি জয়দেবের হাতে ফিরিয়ে দিলেন। শ্রীক্ষেত্রে গীতগোবিন্দের ব্যাপক প্রচার হয়ে গেল, সবাই গীতগোবিন্দের প্রশংসা করতে লাগলো। এসব দেখে রাজার মনে হিংসা জন্মে গেল।
তিনি বললেন গীতগোবিন্দের নাম করে জয়দেব নিজের প্রতিষ্ঠা করেছে তাই এই গ্রন্থ জগন্নাথ স্বীকার করবেন না। তাই পরীক্ষা করার জন্য জগন্নাথের এক হাতে নিজের রচিত গ্রন্থ আর এক হাতে গীতগোবিন্দ রেখে দিলেন। রাজার গ্রন্থটি জগন্নাথের হাত থেকে পরে গেল কিন্তু গীতগোবিন্দ গ্রন্থটি জগন্নাথ বুকের কাছে ধরে রইলেন। গীতগোবিন্দ তাঁর এতই প্রিয় যে, যেখানেই গীতগোবিন্দ পাঠ হয় আস্বাদনের জন্য সেখানেই প্রভু স্বয়ং সেখানে ছুটে যান। তার প্রমান, মন্দির থেকে কিছু দূরে মাঠের ধারে মালিনীর বাসা। মালিনীর মেয়ে সেখানে গীতগোবিন্দ পাঠ করবে শুনে জগন্নাথ মালিনীর পেছন পেছন সেখানে গিয়ে হাজির। পথে কাঁটা, নুড়ি প্রভুর আমার কোমল চরণকমলকে ক্ষতবিক্ষত করে দিল। সমস্ত কষ্টকে উপেক্ষা করে তিনি চললেন গীতগোবিন্দ শ্রবণ করতে। পরদিন পাণ্ডারা মন্দিরের দরজা খুলে দেখেন প্রভুর চরনে রক্ত, প্রভুর কাপরে কাঁটা গাছের পাতা। সংবাদটি রাজার কাছে যেতেই রাজা উন্মাদের মতো মন্দিরে এসে অশ্রুসজল চোখে বললেন, প্রভু তুমি তো জগতের নাথ।
কি এমন দুর্লভ বস্তু যার উদ্দেশ্যে তোমাকে এই যন্ত্রনা উপেক্ষা করে নিজে সেখানে যেতে হয়েছে তোমার এই ভৃত্য থাকতে? আহা…. মরি মরি প্রভু। তোমার শ্রীচরণে কতই না বেদনা বলে মাথা ঠুকতে লাগল। দৈববাণী হল, আমি বার্তাকুর খেতে গিয়েছিলাম। মালীর দুহিতা সেখানে গীতগোবিন্দ পাঠ করছিল আমি তাই শুনতে গিয়েছিলাম। আমি বড়ই তৃপ্তি পেয়েছি। শ্রীগীতগোবিন্দ যেখানেই পাঠ হবে আমি সেখানেই যাব। এই কথা শুনে রাজা আদেশ দিলেন কোন অপরিচ্ছন্ন স্থানে যদি গীত গোবিন্দ পাঠ করা হয় তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। তারপর রাজা জগন্নাথের মন্দিরে গীতগোবিন্দ পাঠের স্থায়ী ব্যবস্থা করেদিলেন। আজও ত্রিসন্ধ্যা জগন্নাথ মন্দিরে গীতগোবিন্দ পাঠ হয়।
সচল জগন্নাথ শ্রীমন্ মহাপ্রভুরও অত্যন্ত প্রিয়। তিনি বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে গীতগোবিন্দ আস্বাদন করতেন। জয় জগন্নাথদেব।