দুর্জয় ডেস্ক : গ্রাহকদের হাতে অবরুদ্ধ থাকা পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্সের এজিএম নামধারী ইছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম মুক্ত হয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। পুলিশি সহায়তায় মুক্ত হয়ে আসলেও এক মাসের মধ্যে সমুদয় টাকা পরিশোধ করার অঙ্গীকার নিয়ে এখন তালবাহানা করছেন তিনি।
পলিসির মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রতারিত গ্রাহকদের কয়েকজনের টাকা গোপনে পরিশোধ করে আন্দোলন থামিয়ে দেয়ার অপকৌশল নেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
এদিকে একজন প্রধান শিক্ষক হয়েও লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এজিএম পদ নিয়ে প্রতারণায় লিপ্ত হওয়ার ঘটনায় রবিউল ইসলামকে ঘিরে তুমুল হৈচৈ শুরু হয়েছে।
তথ্য মিলেছে, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এজিএম ফিল্ড পদ নিয়ে ইছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম গ্রাহকের সাথে প্রতারণা করে আসছিলেন। এজিএম নামধারী প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম নিজে ও স্থানীয় ফিল্ড কর্মী আমেনা বেগমের মাধ্যমে টাকা আদায় করে পকেটস্থ করেছেন। রবিউল ইসলামের মাধ্যমে গ্রাহক পলিসি খুলে মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও এখন টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। ১২ বছরের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ৩ থেকে ৪ বছর আগে। প্রতিমাসে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পপুলারে বিন্দু বিন্দু করে টাকা জমিয়ে এজিএম রবিউল ইসলাম ও ইনচার্জ সুজনের কাছে আজ ধরাশায়ী অনেকে। বড় আশায় বুক বেঁধে তারা ভেবেছিল একসাথে টাকা পাবেন। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও তারা মূল টাকাটিও ফেরত পাচ্ছেন না। আবার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কাউকে টাকা দিলেও অনেককে অর্ধেক করে হিসেব করে চেক দিচ্ছেন। অব্যাহত এসব প্রতারণা ও মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও টাকা না দেয়ার ঘটনায় গত ৪ সেপ্টেম্বর ডাকাতিয়ায় ধরাশায়ী হন শিক্ষক রবিউল ইসলাম। ভুক্তভোগী বিক্ষুব্ধরা তাকে মোটরসাইকেলসহ আটকে রাখেন। টাকা না দিলে তাদের ছাড়া হবে না বলে এলাকায় মিছিল করেন নারীরা। অবস্থা এতোটাই বেগতিক যশোরের ডাকাতিয়া দক্ষিণপাড়ায় পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্সের এজিএম পরিচয় দেয়া প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামকে আটকে রাখেন বিক্ষুব্ধ ২৬ জন গ্রাহক। পরে কোতোয়ালি থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। মুচলেকা নিয়ে রবিউল ইসলামকে উদ্ধার করেন বিক্ষুব্ধ গ্রাহকদের হাত থেকে। এসময় এক মাসের মধ্যে গ্রাহকদের সমস্যা সমাধান করবেন মর্মে অঙ্গীকার করেন রবিউল ইসলাম।
ভুক্তভোগী ডাকাতিয়ার দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী শাহানারা আক্তার রেনু ও আমির হোসেনের স্ত্রী রওশন আরা আক্তার মিনু জানিয়েছেন, তারা কেউ ১০ বছরের কেউ ১২ বছরের বীমা খোলেন। ৩ বছর আগে মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও অদ্যাবধি তারা টাকা পাননি। তারা শুধুই ঘুরছিলেন। এ কারণে রবিউল ইসলামসহ দুই জনকে তারা আটকে রাখেন। কিন্তু মুক্ত হয়ে নতুন করে প্রতারণা শুরু করেছেন রবিউল ইসলাম।
স্থানীয় সমাজকর্মী মোজাম্মেল হোসেন সোহাগ জানিয়েছেন পপুলারের এজিএম রবিউল ইসলাম মূলত ইছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাকে আটকে রাখার খবরে তিনিও গিয়েছিলেন স্পটে। জনতা খুবই ক্ষুব্ধ ছিল। পুলিশ না আসলে বড় ধরণের ঘটনা ঘটতে পারত। কিন্তু মুক্তি পেয়ে তিনি চোখ পাল্টি দিচ্ছেন। পাবলিকের টাকা পরিশোধ না করেই তিনি পপুলার থেকে সটকে পড়তে চাইছেন। ইন্স্যুরেন্সের এজিএম পদ নিয়ে প্রতারণার বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে তিনি ওই পদ ছাড়ার প্রক্রিয়ায় গোপনে পপুলার অফিসে আসা যাওয়া করছেন। এসব ঘটনা ধামাচাপা দিতেও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
স্থানীয় অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, একজন প্রধান শিক্ষক হয়েও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এজিএম পদ নেয়া ও প্রতারণার ঘটনায় তাকে নিয়ে এলাকায় তুমুল হৈচৈ শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে এসআই মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, এজিএম নামধারী রবিউল ইসলাম মুচলেকা দিলে তাকে উদ্ধার করে মুক্ত করা হয়। এক মাসের মধ্যে গ্রাহকদের সমস্যা সমাধান করবেন বলেও তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন।
এসব ঘটনার ব্যাপারে পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্সের এজিএম (ফিল্ড) পরিচয় দানকারী ইছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম জানান, বিক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা ভুল বুঝে তার উপর ক্ষিপ্ত হয়। এসময় প্রধান শিক্ষকের পরিচয় কৌশলে গোপন করে বলেন তিনি অবসরপ্রাপ্ত একজন স্কুল শিক্ষক। জানান ফিল্ড কর্মী কিছু টাকা জমা দেয়নি। তাই নিয়ে হিসেবে কিছু গড়মিল আছে। এছাড়া মেয়াদ উত্তীর্ণ গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। উপর মহল থেকে চেক না ছাড়লে তার কি করার আছে? তবে সমস্যার কারণে এখনও অনেকের টাকা পরিশোধ করা যায়নি সত্য। প্রতারণা, অপকৌশল ও অর্থ আত্মসাতের যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সত্য নয়।