আশিকুর রহমান, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক বিরুদ্ধে আবার ও একাাধিক অভিযোগ উঠেছে। প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন পালের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ আত্মসাৎ ও শিক্ষক কর্মচারিদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করার অভিযোগ রয়েছে। যে কারনে গত ৪ আগষ্ট-২০ ইং তারিখে তাকে বিদ্যালয়ের সকল দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়ে অবশেষে বেতন-ভাতা বন্ধ করে দিয়েছেন ম্যানেজিং কমিটি।
কালীগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক-২০১০ সালে ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান। সে সময় থেকে স্কুলের অর্থ আত্নসাৎ করে থাকে। এসব ঘটনায় তিনি এর আগে ৪ বার সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক এক অভিভাবক সিদ্দিকুর রহমান অথর্ আত্নসাতের অভিযোগে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সূবর্না রানী সাহা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্য ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মধু সুদন সাহা, ম্যানেজিং অভিভাবক কমিটির সদস্য শাহাজান আলি, ও শিক্ষক প্রতিনিধি সুজিত কুমার। তদন্ত কমিটি দীর্ঘ ৩ মাস বিভিন্ন কাগজ পত্র ও স্কুলের ক্যাশ খাতা, আয়-ব্যায়ের ভাউচার তদন্ত করে ৯১ হাজার ৪’শ ৭৪ টাকা আত্নসাতের প্রমান পান। এ টাকা স্কুল ফান্ডে জমা দেবার জন্য প্রধান শিক্ষক চিত্ত রঞ্জন পাল কে প্রথমে মৌখিক ভাবে জানালে তিনি টাকা দিতে অস্বিকার করেন। অবশেষে ২৯ এপ্রিল ম্যানেজিং কমিটির এক সভায় ৯১ হাজার টাকা এক মাসের মধ্যে স্কুল ফান্ডে জমা দেবার জন্য নোটিশ প্রদান করেন।
এ টাকার মধ্যে রয়েছে একটি খাতে ৭৬ হাজার টাকা ও অপর একটি খাতে ১৫ হাজার টাকা। বর্তমানে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সাইফুদ্দিন আহম্মেদ। বই উৎসব ২০২০ সালে সরকারি বই বিনামুল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণী বই প্রদানের নিয়ম থাকলে ও প্রধান শিক্ষক ঘোষনা দেন প্রতি শিক্ষার্থীকে ৩০০ টাকা জমা দিয়ে নতুন বছরের বই গ্রহন করতে হবে। এ টাকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া নিয়ে উঠে তুমুল ঝড়। যা নিয়ে পত্র পত্রিকা ও টেলিভিশনে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বই দিয়ে টাকা গ্রহন ঘটনা নিয়ে ৪ টি তদন্ত কমিটি গঠন হয় ও তদন্তে তিনি ফেসে যান।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেউ যেমন ৫ জন শিক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করার জন্য ফর্ম ফিলাপের টাকা জমাদিলে ও প্রধান শিক্ষক ঐ টাকা শিক্ষা বোর্ডে জমা না দিয়ে নিজে আত্নসাৎ করেছিল। অনিয়ম আর দূর্নীতির অভিযোগ তদন্তে প্রমানিত হওয়ায় সাময়িক বরখাস্ত হবার পর নিজ কক্ষে তালা ঝুলিয়ে চলে যান ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন পাল। এরপর তিনি কক্ষের চাবি ফেরত দেননি। চাবি চেয়ে চিঠি দিলেও তিনি সেই চিঠি গ্রহন না করে বিদ্যালয়ের চাবি নিজের কাছে রেখে দেয়। প্রবেশ পত্র না পেরে ৫ শিক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। তাদের পরবর্তীতে আবার সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি হতে হয়েছিল। এছাড়া অনেক শিক্ষার্থী তাদের এসএসসি ও জেএসসির সনদপত্র নিতে বিদ্যালয়ে আসেন কিন্তু প্রধান শিক্ষক মুল সনদ কালীগঞ্জ শহরের নিজ বাড়িতে রেখেছেন। এসব সনদ প্রদানের সময় নেওয়া হয় ২,শ থেকে ৩,শ টাকা। টাকা না দিলে তাদের কে মুল সনদ দেওয়া হয় না।
২০১১ সালের প্রথম দিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চিত্তরঞ্জন পালের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির নানা অভিযোগ উঠে। সে সময়ে শিক্ষকদের মাঝে এই নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০১১ সালের ২৫ জুলাই এক সভা করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। যার প্রধান করা হয় ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সাইফুদ্দিন আহম্মদকে। তারা তদন্ত শেষে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬১ টাকার দূর্নীতি করা হয়েছে মর্মে একটি প্রতিবেদন জমা দেন। এই প্রতিবেদন নিয়ে চলে নানা তদবির। অবশেষে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ২০১৩ সালের ২৫ সেপ্টম্বর এক সভা করে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
এক পর্যায়ে তিনি স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম এর কাছে পূণরায় তদন্তের জন্য একটি আবেদন করেন। পূর্বের তদন্তের সময় আয়-ব্যয়ের বেশ কিছু কাগজপত্র তিনি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন। সাংসদের সুপারিশে বিদ্যালয়ের বাইরের কিছু সিনিয়র শিক্ষককে দিয়ে আবারো তদন্ত করা হয়। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারী বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি আরেকটি সভা করে চার সদস্য বিশিষ্ট নতুন তদন্ত কমিটি করেন। সেই কমিটির প্রধান চাপরাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমজাদ আলী স্বাক্ষরিত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ৩ লাখ ১৬ হাজার ৩৩৬ টাকার অনিয়ম ও দূর্নীতি হয়েছে। এই টাকা বিদ্যালয় তহবিলে ফেরতযোগ্য। তৎকালীন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে কালীগঞ্জ থানায় একটি জিডিও করেছিল।
এরপর সভাপতি হন শেখ মোহতাশামুল হক ওরফে মারুফ হোসেন তিনি দায়িত্ব গ্রহন করার পর বিদ্যালয়টি সুষ্ঠু ভাবে চালানোর জন্য প্রধান শিক্ষক কে বিভিন্ন পরামর্শ দেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক কোন কিছুই তোয়াক্কা করতেন না। সে সময়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আরিফ সরকার বলেছিলেন প্রদান শিক্ষকের কারনে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নানা অীনয়ম, দূর্ণীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারনে শিক্ষার পরিবেশ ক্রমান্বয়ে ঘাটতি হচ্ছে। স্কুলের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির মধ্যে সর্ব সময় গ্রুপিং করে রেখে পরিবেশ টা নোংরামি করে রাখে। এদিকে স্কুলের ব্যায়ের ভাউচার নিজে চাপিয়ে নিজের ইচ্ছা মত টাকার অংক বসিয়ে বাড়তি টাকা আত্নসাত করেন। এ প্রধান শিক্ষক এলাকার বহুল আলোচিত বলে প্রচার রয়েছে।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অন্য অভিযোগ গুলোর মধ্যে রয়েছে