আজ সকালে রোজকার মত হাঁটতে বের হয়েছি আমি,ফজরের নামায পড়েই।
হাঁটতে হাঁটতে অনেক দিন পর বন্ধু মফিজের সাথে ভাগ্যক্রমে দেখা হয়ে গেল পথের মাঝে,মফিজ আর আমি একটা গাছের নীচে দাঁড়িয়ে কুশল বিনিময় করলাম।তারপর মফিজকে প্রশ্ন করলাম,তোরে এখন খুঁজে পাইনা কেন মফিজ? এফবিতেও দেখিনা,মফিজ বলল,দোস্ত আর ইচ্ছে করেনা এফবিতে যেতে।আমি কারণ জানতে চাইলাম কেন আমাকে বলা যাবে,মফিজ বলল, শোন দোস্ত এখন যে পরিমান জ্ঞানী গুনির আবির্ভাব হয়েছে তাতে দেশ জাতি যেন সমৃদ্ধ হয়ে গেছে,সরকার ইচ্ছে করলে জ্ঞানপাপী কিছু পণ্ডিত রপ্তানি করতে পারে বিদেশে।মফিজের কথা শুনে আমি হো হো করে হেসে উঠলাম,মফিজ বলল,শোন দোস্ত আরো কিছু ব্যাখ্যা তোকে দেই,যেমন ধর পণ্ডিত আর পাণ্ডিত্য, এই শব্দ দুটোর সাদৃশ্য এক হলেও পার্থক্যগত দিক দিয়ে মনে হয় এরা সৎ ভাই ভাই।
শিক্ষিত মূর্খ আর অক্ষরজ্ঞানহীন মূর্খও সৎ ভাইয়ের মত ভাই ভাই।
তবে ইদানীং কিছু জ্ঞানপাপী মূর্খের আবির্ভাব চরম পর্যায় পৌছে গেছে,আর অক্ষরজ্ঞানহীন মূর্খ গুলো সেই থেকেই দারুণ উপাদেয়,কারণ এদের দেশের কাজে লাগিয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো যায়।
কিন্তু বিরানি মার্কা জ্ঞানপাপী মূর্খ গুলো দিয়ে,দেশের কাজে লাগালে ধুমপানের মত সুখ টান দিলেই, কাশির উদ্রেক হবে।কারণ এদের দেশের কাজে লাগানো হলে,দেশ যতটা উপকার পাবে তার চাইতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেশি,জ্ঞানপাপী মূর্খ গুলো সময়ের বিবর্তনে এখন অন্যতম প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে।
যেমন ধর- বৈরী আবহাওয়ার সাথে যদি মৃত্তিকার বন্ধুত্ব হলে,তখন বৃক্ষের শিকড়ের ক্ষয় হয়।
আর বৈরী আবহাওয়ার প্রাদুর্ভাবও সময়ের পালে এখন বেড়ে গেছে,আর এ কারণে করোনার জীবাণু সংক্রামণও বেড়েছে গেছে সর্বত্র।
তাই জ্ঞানপাপী মানুষের সাথে বন্ধুত্ব হলে বন্ধুত্বের অকাল মৃত্যু হয়,অতএব সাবধান তাদের সাথে কখনো তর্ক করবি না তর্ক থেকে বিরত থাকবে।আমিও তর্কে জড়িয়েছিলাম,এ কারণে এখন এফবিতে আসিনা।মফিজ বলল,তবে আরো কারণ আছে,আমি মফিজকে বললাম, আর কি কারণ আমাকে বল দোস্ত,মফিজ বলল, এরা নিজেকে ঈশ্বর প্রাপ্ত জ্ঞানের অধিকারী মনে করে,
এরা কবিতা নাটক উপন্যাস সব গুলোতে পারঙ্গমতা দেখাতে চায়,আবার ইদানীং কিছু স্বরবৃত্ত,অক্ষরবৃত্ত মাত্রাবৃত্ত কবি পাণ্ডিতদের দেখা যায়,আবার কেউ ছন্দ কবি,কেউ আবার অন্তমিল কবি,কেউ গদ্য কবি কেউ কেউ পদ্য কবি।
কেউ আবার হাইকু,
কেউ আবার যাইকু,
মুশকিলটা হল এত পণ্ডিত আর পাণ্ডিত্য নিয়ে আমরা এখন কোথায় যাবো।
কোন কোন কবি বা পণ্ডিত ঠিক রসগোল্লার মত দেখতে,এরা মনে হয় তৈরি হালকা চিনি দিয়ে মিষ্টি কম অথচ রসে টইটম্বুর খেতেও ভারি মজা।
আবার দেখ কেউ কেউ গজা মার্কা পণ্ডিত,খেতে মিষ্টি কিন্তু এত শক্ত চিবুতে গেলে দাঁতও ভাঙ্গে মাঝে মাঝে,আবার কিছু জিলাপি প্যাচের কবি পণ্ডিত আছে,তাদের পাণ্ডিত্যও জিলাপি প্যাচের মত।তবে দোস্ত এদের আবার ছয়টা মাজহাবে ভাগ করা যায় যেমনঃ
১,গদ্য কবি মাজহাব
২,মাত্রাবৃত্ত মাজহাব
৩,স্বরবৃত্ত মাজহাব
৪,অক্ষরবৃত্ত মাজহাব
৫,ছন্দ মাজহাব।
৬,প্রবন্ধ মাজহাব।
আরো ইত্যাদি ইত্যাদি
মাজহাব আছে,তবে এটা ধর্মের মাজহাব নয় এটা কবিতার মাজহাব।যেমন ইসলামেও এই মাজহাব থেরাপিতে মুসলমানরা বিভক্ত,কেউ জোরে আমিন বলে,কেউ আবার মনে মনে আমিন বলে।একদল অন্য দলকে মেনে নিতে পারে না,তবে কবি মাজহাবেও একি দৃশ্য বর্তমান বিরাজ করছে,এখানে পণ্ডিত তার পাণ্ডিত্য নিয়ে তর্ক করে।মফিজের বলা শেষ হলে,আমি বললাম দোস্ত কবি মাজহাবের ব্যাখাটা আর একটু শুনতে চাই,মফিজ বলল,এই মাজহাবের ঘটনা অন্যদিন বলবো,বলেই মফিজ বলল,চল এবার যাওয়া যাক।আমি মফিজকে বললাম দোস্ত,চল আজ আমার বাসায়,মফিজ শুধু বললো দোস্ত আমার ঘরে মানচিত্র নগ্ন,আমি যাই বলেই হাঁটা শুরু করল।আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না,শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম মফিজের চলে যাওয়া।
মনি জামান