রায়হান হোসেনঃ
যশোরের চৌগাছা পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে চুরি-ছিনতাইসহ হত্যাকান্ডের ঘটনা। ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে উপজেলার অপরাধ চিত্র। বিশেষ করে ওসি আনোয়ার হোসেনের যোগদানের পর থেকে উপজেলায় চুরি-ছিনতাই ও হত্যার ঘটনা বেড়েছে।
পাঁচ আগষ্টের পরে উপজেলায় ঘটেছে ছয়টি হত্যাকান্ডের ঘটনা। এর মধ্যে এক মাসের মধ্যে তিনটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। শেষ তিনটি হত্যা কান্ডে চৌগাছা থানা পুলিশ কোনো আসামী গ্রেফতার করতে না পারা পুলিশের চরম ব্যর্থতা হিসেবে দেখছে উপজেলার সাধারণ মানুষ। আর পুলিশের নিরব ভুমিকায় অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার পরিবর্তনের পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আইানশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল কমে আসায় অপরাধীরা বেশি সক্রিয় হয়েছে। একই সাথে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং ও চোর চক্রের সদস্যরা।
গত ৩০ জানুয়ারি অপহরণের শিকার ট্রাক ড্রাইভার মিন্টু মিয়াকে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশ হামলার শিকার হয়। যদিও মামলার এজাহারে পুলিশ এসাল্টেরে বিষয়টি এড়িয়ে যায় ওসি আনোয়ার হোসেন। এতে উপজেলায় পুলিশের ইমেজ সংকট তৈরি হয়।
২০ জানুয়ারি উপজেলার পুড়াহুদা গ্রামের ইজিবাইক চালক রকিকে হত্যা করে ইজি বাইক ছিনতাই করে কিশোর গ্যাংয়ের তিন সদস্য। এঘটনার চার দিন পরে যশোরের পিবিআই সদস্যরা রকির লাশ উদ্ধার করে। এই অপরাধে জড়িত তিনজনকেই আটক করে পিবিআই। এঘটনায় ওসি আনোয়ারের ভুমিকা ছিল রহস্যজনক।
৮ মার্চ ভোরে উপজেলার পাতিবিলা গ্রামের শরিফুল ইসলাম (৪২) কে কুপিয়ে হত্যা করে ছেলে রমিম(২১)। এঘটনার দুই সপ্তাহ পার হলেও পুলিশ রমিমকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
সবশেষ ১০ মার্চ উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে স্বামী সিজার ওরফে রাকিব ইসলামের লাঠির আঘাতে স্ত্রী রেকসোনা খাতুনের মৃত্যু হয়। এঘটনায়ও চৌগাছা থানার পুলিশ ঘাতক রকিবুল ইসলামকে আটক করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এছাড়া প্রতিবেশির ‘কু’ নজরে পড়ে ১০ ডিসেম্বর বাঘারদাড়ি গ্রামের রাবেয়া বেগম (৪৮) খুন হয়। ২২ অক্টোবর উপজেলার পুড়াপাড়া গ্রামে বিএনপি কর্মী শওকত আলীকে পিটিয়ে হত্যা করে আওয়ামীলীগের কর্মীরা। ২৯ অক্টোবর উপজেলার সিংহঝুলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আনিছুর রহমান নিহত হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চৌগাছা শহর ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করেছে সন্ত্রাসীরা। মাদক বেচাকেনাও বেড়েছে। এ ছাড়া আগে বড় কোনো ঘটনা ঘটলে পুলিশের যে তৎপরতা বা অভিযান থাকতো, সেটাও ঝিমিয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি উপজেলা আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে একাধিক বক্তা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর তৎপরতা ঝিমিয়ে পড়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীদের মধ্যে এখন আগের মতো ভয় নেই। এর ফলে মানুষ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। পুলিশের নিস্ক্রিয়তার ফলে উপজেলায় চুরি বেড়েছে।
চৌগাছা উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা গোলাম মোরশেদ বলেন, সম্প্রতি উপজেলায় হত্যা, চুরি, এবং চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম বেড়েই চলেছে। কিন্তু পুলিশ সন্ত্রাসীদের দমন না করে চৌগাছার শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম বলেন, চৌগাছা থানার পুলিশ এখনো আওয়ামীলীগের দালালি করছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা শহর দাবিয়ে বেড়ালেও পুলিশের ভুমিকা নিরব। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও পুলিশ গুরুত্ব দিচ্ছেনা। তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনসহ উপজেলার সকল কর্মকর্তাদের মনে এখনো আওয়ামী ভুত রয়েই গেছে। পুলিশের নিরব ভুমিকার কারনে অসাধু চক্র উপজেলাকে অশান্ত করে তোলার চেষ্টা করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও হাকিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান বলেন, আমরা চাই চৌগাছার প্রতিটি নাগরিক নিরাপদে থাকুক। শান্তিপূর্ণ ও স্বস্তির পরিবেশ বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “অপরাধ দমনে পুলিশের যে কোনো গঠনমূলক উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।
সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়েছে অস্বীকার করে চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশের তৎপরতা মোটেও ঝিমিয়ে পড়েনি। চুরির কোনো খবর আমার জানা নেই। কেউ না জানালে আমি কিভাবে জানব চুরি হচ্ছে। আমরা সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করছি। হত্যাকান্ডে জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে। ঈদ উপলক্ষে টহল কার্যক্রম জোরদার করা হবে।
Leave a Reply